চেক জিসঅনার ও আইনগত প্রতিকারঃ
চেক ডিসঅনার বলতে কি বোঝায় ?
চেক ডিসঅনার বলতে, একটি চেক যখন নগদায়ন বা টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে জমা প্রদান করা হয়, কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উক্ত চেকটি নগদায়ন বা টাকা প্রদান না করে চেকটি ফিরিয়ে দেওয়াকেই বোঝায় ।
চেক কি কি কারনে ডিসঅনার হতে পারে ?
একটি চেক বিভিন্ন কারনে ডিসঅনার হতে পারে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারন গুলো হলোঃ
১। চেক প্রদানকারীর একাউন্টে অপর্যাপ্ত তহবিল
২। চেকে লিখিত টাকার পরিমান অংকে ও কথায় গড়মিল
৩। চেকের মেয়াদ উর্ত্তীন হলে
৪। চেক প্রদানকারীর স্বাক্ষর মিলে না
৫। চেক প্রদানকারী কর্তৃক পরিশোধ বন্ধ করা হয়েছে
৬। প্রদানকারী কর্তৃক তার একাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে
এগুলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু কারনে চেক ডিসঅনার হতে পারে । ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যে কোন প্রকৃতির চেক যে কোন কারনেই আপনার প্রদত্ত/উপস্থাপিত চেকটি নগদায়ন বা টাকা প্রদান না করে চেক ফেরত প্রদান করলে সেটি হবে চেক ডিসঅনার ।
মনে রাখবেন, চেক ডিসঅনার করা হলে ব্যাংক থেকে আপনাকে অবশ্যই একটি ডিসঅনার স্লিপ প্রদান করবে এবং সেই স্লিপে ডিসঅনারের কারন উল্লেখ থাকবে । পরবর্তীতে চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলা করার জন্য আপনার এই ডিসঅনার স্লিপ এর প্রয়োজন হবে ।
চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত বিরোধের প্রতিকার কি ?
The Negotiable Instrument Act 1881 বা যেটাকে আমরা বাংলায় হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন ১৮৮১ বলে থাকি । এটি বিশেষ আইন । হস্তান্তরযোগ্য দলিল তথা প্রমিসরি নোটস, বিল অন একচেঞ্জ এবং চেক সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুততার সাথে নিষ্পত্তি করার জন্য এই আইন প্রনয়ন করা হয় । চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলা এই আইনের ১৩৮ ধারা অনুসারে দায়ের করা হয় । এটি ফৌজদারী প্রকৃতির মামলা এবং এই মোকদ্দমাতেই দ্রুত প্রতিকার পাওয়া যায় । এছাড়াও চেক প্রদানকারীর বিরুদ্ধে চেকে উল্লেখিত টাকা দাবী করে দেওয়ানী মামলা করা যায় ।
চেক ডিসঅনার হলে কে কার বিরুদ্ধে মামলা করবেন ?
চেক ডিসঅনার হলে চেক গ্রহীত চেক দাতার বিরুদ্ধে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারা অনুসারে মামলা করতে পারবেন । তবে মামলা দায়েরের পূর্বে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারার শর্তাবলী পূরন করতে হবে ।
কোন কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত চেক ডিসঅনার হলে সে ক্ষেত্রে এই আইনের ১৪০ ধারা উক্ত কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান এবং উক্ত অপরাধ সংঘটনের সময়ে উক্ত কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায় ।
চেক ডিসঅনার মামলা দায়েরের পূর্বে চেক গ্রহীতাকে কি কি শর্তাবলী পূরন করতে হয় ?
হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারা অনুসারে চেক গ্রহীতাকে চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলা দায়েরের পূর্বে নিচের শর্তাবলী পূরন করতে হয় ।
চেকের মেয়াদঃ
১। চেক গ্রহীতাকে অবশ্যই চেকটি নগদায়নের জন্য চেকের মেয়াদের মধ্যে অর্থাৎ চেকে যে তারিখ উল্লেখ থাকে সেই তারিখ হতে ৬ মাস পর্যন্ত চেকটির মেয়াদ থাকে এবং আপনাকে অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে ।
ডিসঅনারঃ
২। চেকটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ডিজঅনার হলে ব্যাংক হতে ডিসঅনার স্লিপ গ্রহন করতে হবে । একটি চেক তার নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে একাধিকবার ডিসঅনার করা যেতে পারে ।
নোটিশ প্রদানঃ
৩। চেক ডিসঅনার হবার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যেই অবশ্যই চেক দাতাকে ৩০ দিন সময় দিয়ে টাকা পরিশোধের জন্য এডি সহ ডাক যোগে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাতে হবে । চেক একাধিকবার ডিসঅনার করা গেলেও চেক প্রদানকারীকে একাধিকবার নোটিশ পাঠানো যাবে না ।
মামলা দায়েরঃ
৪। চেক দাতা এই নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিন সময়ের মধ্যে চেক গ্রহীতা বরাবর উক্ত টাকা পরিশোধ না করলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে চেক গ্রহীতাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে ।
চেক ডিসঅনার মামলার ক্ষেত্রে এই নির্ধারিত সময় গুলো মেনে চলা বাধ্যতামুলক । এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের পরে নোটিশ প্রদান বা মামলা দায়ের করার কোন সুযোগ নেই ।
চেক ডিসঅনার মামলা কোন আদালতে করতে হবে ?
চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলা আঞ্চলিক এখতিয়ার সম্পন্ন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (১ম শ্রেনী) আমলে গ্রহনের ক্ষমতা সম্পন্ন আদালতে নালিশী দরখাস্ত দায়েরের মাধ্যেম সিআর মামলা আকারে মামলা দায়ের করতে হবে ।
চেক ডিসঅনার মামলা কোথায় অর্থাৎ কোন আঞ্চলিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে দায়ের করতে হবে ?
চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত অপরাধটি একাধিক স্থান মিলিয়ে সংঘটিত হলে এর মধ্যে যে কোন একটি স্থানের আদালতে মামলা করা যাবেঃ
১। চেক প্রদানের স্থানে
২। চেক নগদায়নের জন্য যে স্থানের ব্যাংকে চেকটি উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ডিসঅনার হয়েছে সেখানে
৩। যে স্থান থেকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে সে স্থানে
এগুলোর মধ্যে যে কোন স্থানের আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে । অর্থাৎ আপনাকে যদি চেকটি ঢাকায় প্রদান করা হয়, তাহলে আপনি চাইলে ঢাকায় মামলা করতে পারবেন, আবার আপনি যদি সেই চেকটি দিনাজপুরে নগদায়নের জন্য ব্যাংকে প্রদান করেন এবং দিনাজপুরে চেকটি ডিজঅনার হয় তাহলে আপনি চাইলে দিনাজপুরে মামলা করতে পারবেন আবার আপনি যদি সেই চেক দাতাকে রাজশাহী থেকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান তাহলে আপনি চাইলে রাজশাহীতে মামলা দায়ের করতে পারবেন ।
চেক ডিসঅনার মামলা দায়েরের জন্য কি কি কাগজ পত্রাদি প্রয়োজন হয় ?
চেক ডিসঅনার মামলা দায়েরের জন্য যে কাগজ পত্রাদি প্রয়োজন সেগুলো হলোঃ
১। মুল চেক এবং ডিসঅনার স্লিপ
২। লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পোস্টাল রশিদ
৩। লিগ্যাল নোটীশের কপি
৪। লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির প্রাপ্তি স্বীকার পত্র